দক্ষিন এশিয়ায় রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক

দক্ষিন এশিয়ায় রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক

  • Post by:
  • December 14, 2020
  • Comments off

দক্ষিন এশিয়ায় রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ার একটি অমীমাংসিত বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র এবং ধর্মের সম্পর্ক। রাষ্ট্র ধর্মের ব্যাপারে কোনও ভূমিকা নেবে কিনা এবং সেই ভূমিকা কী হবে সেই বিষয়ে যে ধরণের আলোচনা-বিতর্ক হওয়া দরকার ছিলো দক্ষিন এশিয়ায় সেই আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এর কারণ দু’টি; প্রথমত দক্ষিন এশিয়ায় রাষ্ট্র একেবারে জৈব প্রক্রিয়ায় বা অরগানিকভাবে গড়ে ওঠেনি, অর্থাৎ সমাজে বিরাজমান শক্তিগুলোর মধ্যে আলাপ-আলচনা বা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়নি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে নেপাল, যেখানে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। অন্যত্র রাষ্ট্র গঠন হয়েছে উপনিবেশের অবসানের কারণে। বাংলাদেশ একটি গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হয়েছে, কিন্ত রাষ্ট্রের চরিত্র ও প্রকৃতি নিয়ে সমাজে আলোচনা করে রাষ্ট্র গঠনের কাজে হাত দেয়া হয়নি। ফলে অন্য অনেক বিষয়ের মতই রাষ্ট্র এবং ধর্মের কী সম্পর্ক হবে সেটা একভাবে সমাধান করা হয়েছে কিন্ত সেই বিষয়ে ঐকমত্য আছে কিনা জানা যায়নি।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে দক্ষিন এশিয়ার এইসব রাষ্ট্র যেহেতু পশ্চিমা মডার্নিটির ধারণার আদলে গড়ে উঠেছে সেহেতু এই সব রাষ্ট্র তাঁদের একটি প্রকল্প হিসেবে সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করেছে। ইউরোপে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে সেক্যুলারিজমের উদ্ভব হয় ইউরোপীয় ধর্ম-যুদ্ধের পর, যখন ধর্ম ও সমাজ উভয়ই ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যকার পার্থক্য মেনে নিয়েছিল। সত্যিকার অর্থে, ‘পবিত্র ধারণা’ বা ‘সেক্রেড’ অর্থাৎ খ্রিষ্টধর্মের সেক্যুলারকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে সেক্যুলারিজমের উদ্ভব হয়। কিন্ত পশ্চিমা দুনিয়ার বাইরে অর্থাত্ অ-পশ্চিমা সমাজগুলোতে, যার একটি উদাহরণ হচ্ছে দক্ষিন এশিয়া, এই প্রক্রিয়াটি স্পষ্টত উল্টোভাবে ঘটেছে। সেখানে সেক্যুলারিজমের ভিত্তি গড়ে ওঠার আগেই রাষ্ট্রীয় নীতি এবং রাষ্ট্রের একটি প্রকল্প হিসেবে সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করা হয়েছে। টি এন মদনের মতে, আধুনিকতার মতোই সেক্যুলারিজমও আরোপিত ছিল: ‘অ-পশ্চিমা সমাজগুলোর ধর্মীয় ঐতিহ্যকে বা এই সব ঐতিহ্য উপহার হিসেবে কী দিতে পারে তা আমলে না নিয়েই আধুনিকায়নের মডেলগুলো অ-পশ্চিমা সমাজগুলোতে সেক্যুলারিজম স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছিল’ (‘Secularism in Its Place,’ in Rajeev Bhargava (ed.), Secularism and Its Critics, New Delhi: Oxford University Press, 2005) সে কারণেই, সেক্যুলারকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবার আগেই রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে সেক্যুলারিজম অ-পশ্চিমা সমাজগুলোতে পৌঁছে যায়। সাধারণভাবে ভাবা হয়েছিল যে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করলেই সমাজের সেক্যুলারকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। কিন্ত বাস্তবে তা হয়নিঃ বরঞ্চ সমাজে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁরা বিভিন্ন কারণে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেছে। ফলে রাষ্ট্রের গৃহিত নীতি এবং সমাজের ভেতর থেকে তৈরি হওয়া তাগিদ দুই-ই দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে ধর্ম-ভিত্তিক শক্তিকে সামনে নিয়ে এসেছে।

Share on:
Categories: Bengali