দুদককে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দুদক শক্তিশালী করা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় থেকে দুর্নীতির লাগাম টানতে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের দুদককে সংবিধানে একটি নতুন অনুচ্ছেদে যুক্ত করার প্রস্তাবটি ইতিবাচক বলে সব রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা মতামত দিয়েছেন। তবে আলোচনায় প্রস্তাবিত কাঠামোর কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ দেওয়া হয়। কেউ কেউ নতুন প্রস্তাবও দিয়েছেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে এবং আজ মঙ্গলবারও আলোচনা হবে। গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।

এ সময় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। গতকালের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এদিকে গতকালের বৈঠকে কিছু বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতীকী ওয়াকআউট করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। গতকালের দুটি আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল—সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী এসব বিষয়ে কমিটি গঠন করলে সেটি নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে—এমন দাবি করে বৈঠক থেকে সাময়িক সময়ের জন্য ওয়াকআউট করে বিএনপি।

ওয়াকআউটের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সাময়িক সময়ের জন্য ওয়াকআউট করলাম, কারণ আমরা বলেছিলাম, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য কমিটি করা এবং এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় জটিলতার সৃষ্টি হবে। যাতে সাংবিধানিক এবং সংসদীয় কোনোভাবেই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব না হয়, ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি না হয়, সেজন্য আমরা তিনটি জায়গায় ব্যবস্থা রেখেছি।’

চারটি সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান—সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত এবং সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও গতকাল দুদুক এবং সরকারি কর্ম কমিশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশনের আলোচনায় অগ্রগতি উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, কর্ম কমিশনকে শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য রয়েছে। আলোচনাতে প্রস্তাবিত কাঠামোর কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, কমিটি গঠন সংক্রান্ত দলগুলোর অবস্থান ও ভিন্নমত এবং পরামর্শ এসেছে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশন পর্যায়ক্রমিক আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

দিনের শুরুতে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু সময়ের জন্য বৈঠক ত্যাগ করা প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন তাদের এ অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য জানানো অনুরোধে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়ে পরবর্তী আলোচনায় অংশগ্রহণ করায় তিনি বিএনপির প্রতিনিধিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তি নেই। তবে নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারণ এখনো পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।’

ডা. তাহের বলেন, ‘কে সরকারি বা কে বিরোধী দল হবে, সেটি পরের বিষয়। আমরা দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা থাকবে ১ নম্বরে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। এরই মধ্যে আমরা ছোটখাটো যেখানে দায়িত্ব পালন করেছি, সেখানে আমরা সে দৃষ্টান্ত রেখেছি।’

জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা বিএনপির ওয়াকআউট প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ধরনের বৈঠক থেকে ওয়াকআউটের কোনো সুযোগ আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। আমরা বলেছি, পিএসসি সাংবিধানিক হতে হবে। তারা কেন বিরোধিতা করছেন, তার মানে আপনারা দলীয়করণ করতে চান। এ নিয়ে দেশের জন্য ভালো হলে আর কোনো দলের সমস্যা হলে, তা জাতি মানবে না। সচিবালয়ে সারাজনম প্রেতাত্মা থাকবে, তা হবে না। আমরা প্রেতাত্মাবিহীন সচিবালয় চাই।’ তিনি বৈঠকে ফিরে আসায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান।

News Courtesy:

Kalbela | JUly 28, 2025